জিমি ডোনাল্ডসন (Jimmy Donaldson) একজন আমেরিকান ইউটিউবার, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক। তার ভিডিওগুলো সাধারণত বড় চ্যালেঞ্জ, অসহায় মানুষকে সহযোগিতা, এবং বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক মহৎ কাজ নিয়ে হয়ে থাকে। জিমি ডোনাল্ডসন ইউটিউবে মিস্টার বিস্ট (MrBeast) নামে পরিচিত।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে তিনি হয়ে উঠেছেন youtube এর কিংবদন্তি। সাধারণ জীবন থেকে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভেঙেছেন এবং গড়েছেন। হ্যাঁ তিনি জিমি ডোনাল্ডসন, যাকে সবাই মিস্টার বিস্ট নামে চিনে।
দশ বছর পূর্বের কথা, জিমি তখন একজন সাধারণ আমেরিকান তরুণ। ইউটিউবের জন্য কনটেন্ট তৈরি তার ইচ্ছে থেকে নেশা হয়ে দাঁড়ায়। তবে তার আগে তিনি ১৩ বছর বয়স থেকে ইউটিউবে গেমিং ও এলোমেলো বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করে গেলেও সাড়া পায়নি।
তখন কেউ তার ভিডিও গুলো দেখতো না, বন্ধু এবং পরিবারের সবাই বলতো তুমি পাগল হয়ে গেছো। কিন্তু কখনোই তিনি থেমে যাননি। দিনরাত এককরে টানা ৭ বছর কাজ করে গিয়েছেন। তৈরি করেছেন শত শত ভিডিও।
তার বিশ্বাস ছিল একদিন মানুষ ঠিকই তার ভিডিও দেখবেন। ২০২৫ সালের ১ জুন। ইউটিউবের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়। জিমি ডোনাল্ডসন তথা মিস্টার বিস্ট (MrBeast) এর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০০ মিলিয়ন তথা ৪০ কোটি।
সবাইকে পিছনে ফেলে তিনি হয়ে ওঠেন পৃথিবীর সবথেকে জনপ্রিয় ইউটিউবার। মিস্টার বিস্ট এর এই বিরল অর্জনের জন্য ইউটিউব এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নীলমোহন জিমির হাতে তুলে দেন বিশেষভাবে তৈরি করা ‘টাইগার প্লে বাটন’।
ইউটিউব লোগো সেইভের চকচকে ধাতব কাঠামোর মধ্যে বসানো নীল রঙের পাথর। যা দেখতে একেবারেই অনন্য।
জিমির ইউটিউব চ্যানেলের (MrBeast) সাবস্ক্রাইব সংখ্যা ৪০০ মিলিয়ন তথা ৪০ কোটি। যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার দ্বিগুণ। হয়তোবা পৃথিবীতে এমন কোন দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে মিস্টার বিস্টের দর্শক নেই।
মিস্টার বিস্টের ভিডিও মানেই বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। তিনি স্কোয়াইড গেমের পুরো সেট বাস্তবে তৈরি করেছেন। এছাড়া ১০০ ঘন্টা মিশরের পিরামিডে অবস্থান, ৫০ ঘণ্টা কবরের মধ্যে অবস্থান, এই চ্যালেঞ্জগুলো দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।
তিনি মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে ভালোবাসেন। তার ভিডিওর মাধ্যমে কেউ হয়তোবা বাড়ি পায়, আবার কেউ গাড়ি পায়। কেউ পেয়েছেন একটা ব্যক্তিগত দ্বীপ আবার কেউ একজন পেয়েছে একটি ব্যক্তিগত প্রাইভেট বিমান।
জিমির মিস্টার বিস্ট Youtube চ্যানেলের প্রথম আয় দশ হাজার ডলার হাতে পেয়েও তিনি এক ডলার রাখেননি, পুরোটাই দিয়ে দিয়েছেন এক পিজ্জা ডেলিভারি বয় কে। তা ভিডিও করে ইউটিউবে প্রকাশ করলে ধীরে ধীরে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মিস্টার বিস্ট মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসেন। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ১০০ টি কুয়া খনন। ২০ মিলিয়ন গাছ রোপন এবং সমুদ্র থেকে ৩০ মিলিয়ন প্লাস্টিক অপসারণ, এই সবকিছুই তার উদ্যোগে বাস্তব হয়েছে।
২০২০ সালে তিনি গাছ লাগানোর প্রকল্প #TeamTrees শুরু করেন যার লক্ষ ছিল ২০ মিলিয়ন গাছ রোপন এবং তিনি পরবর্তী উদ্যোগে সমুদ্র পরিষ্কারের জন্য #TeamSeas প্রকল্প চালু করেন যার উদ্দেশ্য সমুদ্র থেকে প্লাস্টিক অপসারণ।
তিনি ১০০০ মানুষের চোখের সানি অপারেশন করিয়েছে। পাশাপাশি মিস্টার বিস্টের অনেক ভিডিওতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ ডলার দানের নজির।
কেউ বলেন তিনি ইউটিউবার, কেউ বলেন দানবীর, আবার অনেকে বলেন একজন স্বপ্নবাজ বিপ্লবী। তবে একটি কথা সত্য ‘মিস্টার বিস্ট শুধু ভিডিও তৈরি করেন না, মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দেন’। এজন্য আজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ তাকে ভালবাসেন এবং অনুসরণ করেন।
মিস্টার বিস্ট কেবল একজন ইউটিউবার নন, তিনি প্রমাণ করেছেন যে ইউটিউব শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, সামাজিক পরিবর্তনের শক্তিশালী মাধ্যমও হতে পারে। তার সফলতা শুধু ভাইরাল ভিডিওর উপর নির্ভর করে না; বরং পরিকল্পনা, সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টার ফল।
মিস্টার বিস্ট তথা জিমি ডোনাল্ডসন – আপনার এই সহানুভূতি ও সহযোগিতা মূলক কার্যক্রম চলমান থাকুক। আপনাকে অনুসরণ করে পৃথিবীর হাজারো তরুণ পৃথিবী পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারবে। ইউটিউবে ৪০ কোটির বেশি সাবস্ক্রাইবার অর্জনে আপনাকে অভিনন্দন।
