হলিউড সিনেমার অন্যতম সেরা অ্যাকশন তারকা টম ক্রুজের জন্মদিন ৩ জুলাই। চার দশক ধরে হলিউড সিনেমায় দাঁপিয়ে বেড়ানো এই অ্যাকশন তারকা আজ থেকে ৬৩ বছর আগে এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিউইয়র্কে এর সিরাকিউজে শহরে।
মিশন ইম্পসিবল অথবা টপ গান সিনেমার নাম শুনলে দর্শকের হৃদয়ের যে নামটি প্রতিফলিত হয় তা হল টম ক্রুজ। বর্তমান অতীতের যুগে দর্শকরা যখন অনেকটাই প্রেক্ষাগৃহ-বিমুখ তখন টম ক্রুজ এর সিনেমা মানেই সিনেমা হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভীর।
গোটা বিশ্বে টম ক্রুজের ভক্তের তালিকাটা অত্যন্ত দীর্ঘ আর তাই তার জন্মদিনে আজ এফএনএফ নিউজ তার বিষয়ে সকল জানা-অজানা তথ্য তুলে ধরবে তার অসংখ্য অগণিত ভক্তদের উদ্দেশ্যে।
টম ক্রুজের জন্মঃ ১৯৬২ সালের ৩ জুলাই, নিউইয়র্কের সিরাকিউজে জন্ম হলিউডের অ্যাকশন ও সুদর্শন তারকা টম ক্রুজের। তার বাবা ছিলেন একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
সিনেমা জগতের সাথে পরিবারের কোন সম্পর্ক না থাকার পরেও কেবল মাত্র চার বছর বয়সেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে এই তারকার। ডোনাল্ডা ডাক, এলভিস প্রিসলিদের মত বিখ্যাত ব্যক্তিদের নকল করতেন টম।
ছোটবেলায় যেমন ছিল টমঃ আজকের হলিউডের অ্যাকশন হিরো টম ছোটবেলায় ছিল অত্যন্ত দুঃসাহসী। ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খাওয়া, ফুটবল খেলায় দুঃসাহসিকতা কোনটাই কমতি ছিল না টমের ছোটবেলায়।
পড়াশোনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও নাটক খেলাধুলায় ছিলেন অত্যন্ত চৌকস এবং তিনি যুক্ত ছিলেন গানের দল ও নাট্য দলের সাথেও। স্কুল জীবনে নাটক “গাইস অ্যান্ড ডলস”- এ অভিনয় করার পর থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন পেশা হিসেবে অভিনয়কেই বেছে নেওয়ার।
নিউইয়র্কে বিভিন্ন সিনেমা হাউজে অডিশন দিতে শুরু করেন। এবং তার সুদর্শন চেহারা ও দর্শক আকৃষ্ট অঙ্গভঙ্গির কারণে ১৯৮১ সালে, ট্যাপস সিনেমার মাধ্যমে হলিউডের পর্দায় অভিষেক ঘটে টমের।
টম ক্রুজের প্রথম সিনেমাঃ ১৯৮০ সালে অভিনয় শুরু করলেও ১৯৮৩ সালে রিস্কি বিজনেস সিনেমায় মুখ্য চরিত্র হিসেবে টম সিনেমায় দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে আরম্ভ করে।
রিস্কি বিজনেস সিনেমার আলোচিত নাচের দৃশ্য যেটা পুরোপুরি কোরিওগ্রাফি করেছিলেন টম নিজে। কোন কোরিওগ্রাফার বা সহকারীর সাহায্য ছাড়াই নিজের প্রচেষ্টায় ধারণ করা হয় সেই আলোচিত নাচের দৃশ্য।
টম ক্রুজের প্রথম প্রেমঃ প্রকাশিত তথ্য মতে রেবেকা ডি মনরির সঙ্গে প্রেম শুরু হয় রিস্কি বিজনেস সিনেমার শুটিং চলাকালীন সময়ে।
এই সিনেমার পর নির্মাতা জেরি ব্রাকহেইমারের নজরে আসেন টম। এবং অভিনয় করার সুযোগ পায় “টপ গান” সিনেমায়। ক্যারিয়ারের নতুন মোড় ঘুরিয়ে দেয় এই “টপ গান” সিনেমাই।
রেবেকার সাথে প্রেমের সম্পর্কের গুঞ্জন থাকলেও ১৯৮৭ সালে মিমি রজার্সকে বিয়ে করেন। তবে সে সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদী হয়নি মাত্র তিন বছরের মধ্যে বিচ্ছেদ হয় তাদের দুজনার।
টম ক্রুজের অস্কারে প্রথম নমিনেশনঃ “বর্ন অফ দা ফোর্থ জুলাই” সিনেমার জন্য প্রথমবারের মতো অস্কারে মনোনীত হন টম ক্রুজ।
এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তাকে সাময়িক পক্ষাঘাতগ্রস্ত করার জন্য প্রস্তাব জানান পরিচালক, তবে তাতে রাজি হন না বীমা সংস্থা। কিন্তু এই সিনেমায় তাকে প্রথমবারের মতো অস্কারের নমিনেশনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ করে দেয়।
মিশন ইম্পসিবলঃ টম ক্রুজের মিশন ইমপসিবল ফ্রাঞ্চাইসিটি তাকে নতুন করে অ্যাকশন তারকা হিসেবে সারা দুনিয়ার মধ্যে পরিচিতি লাভ করানোর দায়িত্ব পালন করে। এবং মিশন ইম্পসিবল এর মাধ্যমে গোটা দুনিয়ায় একশন তারকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত হয়।
১৯৯৬ সালে মিশন ইম্পসিবল এর প্রথম পর্ব সিনেমা হলে দর্শকদের মন জয় করে। সিনেমার দুঃসাহসিক সব স্ট্যান্ট, হৈ চৈ ফেলে দেন সিনেমা জগতে। দুঃসাহসিক স্ট্যান্ট গুলোর মধ্যে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা থেকে নিচে ঝুলে স্ট্যান্ট করার সাহসিকতা দেখিয়েছেন টম।
এরপূর্বে ২০০৯ সালে পিপল সাময়িকী তাকে সেরা আবেদনময় তারকা হিসেবে ঘোষণা করেন এবং একই বছরে তিনি অভিনেত্রী নিকল কিডম্যানকে বিয়ে করেন এবং তারা দুটি সন্তান দত্তক নেন। নিকোল কিডম্যানের তথা স্ত্রীর সঙ্গে জুটি বেঁধে বেশ কয়েকটি সিনেমা করেন তিনি।
নিকোল ও টম জুটির অন্যতম সিনেমা, “আইজ ওয়াইড শাট” শুটিং এর জন্য ১৮ মাস লন্ডনে ছিলেন এই তারকা জুটি। এবং পরবর্তীতে ২০০১ সালে তাদেরও বিচ্ছেদ ঘটে।
এবং ২০০৫ সালে অভিনেত্রী কেটি হোমসের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন ওঠে টম ক্রুজের। ২০০৬ সালে বিয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় সে গুঞ্জন, এবং ২০১২ সালে মাত্র ৬ বছরের ব্যবধানে তাদেরও বিচ্ছেদ ঘটে।
টম ক্রুজের মিশন ইম্পসিবল এর ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্টঃ মিশন-ইম্পসিবল শব্দটা সবার আগে মনে করিয়ে দেয় টম ক্রুজের গা ছিম করা সকল ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্টের কথা। মিশন ইম্পসিবল মানেই টম ক্রুজের বিমানের দরজা খুলে ঝুলে থাকা দৃশ্য সবার আগে মনে পড়বে।
যেটি তিনি নিজে সত্যি সত্যি করেছিলেন, কোন দামি গ্রাফিক্স ব্যবহার করেননি। তাছাড়াও ‘ফল আউট’ – এ তিনি নিজেই হেলিকপ্টার উড়িয়েছেন করেছেন স্কাইডাইভ। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় ঝুলে করেছেন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের অভিনয়।
দ্যা ফাইনাল রেকনিং চলচ্চিত্রে হেলিকপ্টার থেকে ১৬ বার আগুনে পোড়া প্যারাসুট নিয়ে লাফ দিয়ে গড়েছেন বিশ্বের বেশি সংখ্যক জলন্ত প্যারাসুট জাম্পের রেকর্ড।
কোন এক সাক্ষাৎকারে টম ক্রুজ বলেছিলেন, “যতদিন পারেন মিশন ইম্পসিবল করে যেতে চান এই ফ্রাঞ্চাইসিটি তার অত্যন্ত প্রিয় এবং তিনি একজন প্রযোজক এই সিনেমার।”
‘দ্যা ফাইনাল রেকনিং’ কি মিশন ইম্পসিবল এর শেষ পার্টঃ এই সিনেমাকে অনেকেই মিশন ইম্পসিবল ফ্রাঞ্চাইজিটির শেষ অংশ হিসেবে বিবেচনা করেছিল। তবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। ছবির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে টম ক্রুজকে প্রশ্ন করা হলে তিনি হেসে বলেন, “শেষ বলে আবার কিছু আছে নাকি?”
অভিনেত্রী কেটি হোমসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আর বিয়ের সম্পর্কে নতুন করে জড়াননি টম ক্রুজ। তবে গত এক দশকে তার সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উঠেছে কয়েকজন অভিনেত্রীর। তবে সর্বশেষ গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তিনি এখন চুটিয়ে প্রেম করছেন কিউবার অভিনেত্রী আনা ডে আরমাসের সঙ্গে।
টম ক্রুজের সিনেমার বক্স অফিস কালেকশনঃ ১৩.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে এখন পর্যন্ত এর সিনেমা গুলোর বক্স অফিসের কালেকশনের রেকর্ড। টম ক্রুজের সিনেমা মানেই দর্শকদের উপচে পড়া ভীর এবং বক্স অফিসে বিশাল কালেকশনের ঝড়।
টম ক্রুজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রাপ্তির হিসাবটা দীর্ঘ হলেও অস্কারের আকাঙ্ক্ষা তার ছিল যেটা পূর্ণ হতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রই। সম্মানসূচক অস্কার পাচ্ছেন টম। ১৬ তম গভর্নর অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৬ই নভেম্বর, আমেরিকার লস এঞ্জেলেস্ শহরে। সেখানে টমের হাতে তুলে দেওয়া হবে বিশেষ সম্মাননার পুরস্কার।
টম ক্রুজ এর নতুন সিনেমার খবরঃ আলেহান্দ্র গনজালেস ইনারিতুর সিনেমায় দেখা যাবে টম ক্রুজকে। ইনারিতুর সঙ্গে টম নিজেও থাকবেন এই সিনেমার একজন প্রযোজক হিসেবে।
সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে আগ্রহের কমতি নেই এই সিনেমাটি নিয়ে কারণ, ইনারিতু ও টম জুটি কেমন হবে সেটা দেখার প্রত্যাশা সবার মনে। টমের এই কমেডি সিনেমা মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ২ অক্টোবর। আর এই কমেডি মুভি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন টম ক্রুজের লাখো লাখো ভক্তরা।
জানতে পারেনঃ ব্রেন অ্যানিউরিজমের শিকার বলিউড ভাইজান সালমান খান।
