বিগত বছরগুলোতে যেখানে দেশের মানুষ কেবলমাত্র উন্নয়নের জয়গান শুনে গেছে সেখানে প্রকৃত চিত্রটা কতটা ভিন্ন তা প্রকাশ পেল রাজধানীতে হয়ে যাওয়া বহুমুখী দারিদ্র বিষয়ক এক সূচকের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের প্রতি চারজন মানুষের একজন মানুষ এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। দেশের জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) বিষয়ক সেমিনারে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়।
আজ রাজধানীর আগারগাঁয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এর পক্ষ থেকে‘‘ বাংলাদেশ জাতীয় বহুমাত্রিক দরিদ্র্য সূচক’’ প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এবং অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন জিইডির সদস্য সচিব-মনজুর হোসেন।
আলোচক হিসেবে ছিলেন (পিপিআরসি) তথা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান। এছাড়াও ছিলেন (বি আই ডি) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক কে এনামুল হক।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং বাংলাদেশের নিয়োজিত ইউনিসেফ এর প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
২০১৯ সালে বিবিএস মাল্টিপল ইন্ডিকেটর কাস্টার সার্ভে (এম আই সি এস) এর তথ্য ব্যবহার করে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক নিরূপণ করা হয়েছে।
বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক বলতে আমরা যা বুঝি তা হল, বহুমাতৃক দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি যা কেবলমাত্র আয় বা ভোগের মতো একক মাত্রার সূচক নির্ণয় না করে। একক মাত্রার বাইরে গিয়ে দরিদ্রকে তার ভিন্ন ভিন্ন দিক থেকে বুঝতে সাহায্য করে।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, কেবলমাত্র আয় এবং ভোগের বিচার না করে দারিদ্রতার বিভিন্ন দিক আলোচনা করে যে সুযোগ তৈরি করা হয় তাকে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক বলা হয়।
বাংলাদেশের দারিদ্র্য সূচকের তিনটি মাত্রা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যার মধ্যে জীবনযাত্রার মানকে প্রধান এবং পর্যায়ক্রমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়।
জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ক এই মাত্রাগুলোকে ১১ টি আলাদা সূচকে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন জীবনযাত্রার মানের মধ্যে অন্যতম হলো- বিদ্যুৎ, খাওয়ার পানি. বাসস্থান, স্যানিটেশন, রান্নার জ্বালানি , ইন্টারনেট সংযোগ এবং সম্পদ।
জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়, দেশে ২৪.০৫ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র সীমা রয়েছে। যা সংখ্যায় গণনা করতে গেলে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ। গ্রামীন এলাকায় এই হার ২৬.৯৬ শতাংশ আর শহরে ১৩.৪৮ শতাংশ।
সিলেট বিভাগে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার সর্বোচ্চ ৩৭.৭০ শতাংশ। সিলেট বাদেও আরো পাঁচটি জেলার ৪০ শতাংশরও বেশি মানুষ বহুমাতৃক দারিদ্রতা স্বীকার জেলাগুলো হল- কক্সবাজার সুনামগঞ্জ বান্দরবান ভোলা ও রাঙ্গামাটি।
এসব এলাকা শিশুদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৮.৭০ শতাংশ প্রাপ্তদের মধ্যে এ হার ২১.৩৪ শতাংশ মাত্র।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণকারী আনিসুর জামান চৌধুরী তার বক্তব্যে আইপিআইকে দারিদ্র দূরীকরণের একটি উদ্বোধনী ও নতুন কৌশল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন যে, তাদের এই পদ্ধতি সর্বাধিক ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।
এছাড়াও তিনি এই সূচকে পরিকল্পনা প্রক্রিয়া ও নীতি নির্ধারণ সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
বিশেষ করে কিছু জেলার দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান ও গবেষণার তৎপরতা আরো বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান প্রধান অতিথি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা জানান, এমপি আইনের গৃহীত ব্যবস্থাটি আয় ভিত্তিক দারিদ্র্য মাপকাঠিকে সম্পূরকভাবে সহায়তা করবে এবং এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে।
সভাপতি বক্তব্যে মনজুর হোসেন জানান জিইডি ভবিষ্যতেও নিয়মিত এই সুযোগ প্রকাশ করে যাবে এবং নীতি নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আরো জানুন: করের চাপে গরিব মরে – আমার তাতে কি?