আপনি কি লোন নেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বেছে নিয়েছেন? কিন্তু কিভাবে লোন নিবেন, কি কি ডকুমেন্টস দরকার এ সম্পর্কে জানেন না। তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য। এই লেখাটি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নেয়ার সম্পূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বাংলাদেশে প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক অন্যতম। প্রবাস গমন ব্যক্তি এবং প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের স্বপ্ন পূরণে ও প্রতিস্থাপনে অনেক বছর যাবত কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
খুব সহজ শর্তে লোন প্রদানের মাধ্যমে, বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের বিভিন্ন সহযোগিতা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার বিশেষায়িত “প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক” চালু করে। প্রতিবছর হাজার হাজার প্রবাসীর স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে তারা।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিয়ম কানুন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস এবং তাদের সকল শর্তাবলীর সাথে সহমত পোষণ করে, আপনার নিকটস্থ Probashi Kallyan Bank শাখা থেকে ফরম পূরণ করে লোনের আবেদন করুন।
অথবা অনলাইন থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের Loan Application Form ডাউনলোড করে, এটিকে প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পূরণ করে নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় জমা করুন। চলুন আবেদন পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ
বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সাধারণত ৪ ধরনের ঋণ প্রদান করে। অভিবাসন ঋণ, পূর্ণবাসন ঋণ, অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ, বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ।
১.অভিবাসন ঋণ
প্রবাসীদের বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করার লক্ষে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এই অভিবাসন ঋণ প্রদান করে। বিদেশে যাওয়ার সকল কাগজপত্র নিয়ে নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করে এই লোন গ্রহণ করতে পারবেন। সর্বোচ্চ ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন।
২.পূর্ণবাসন ঋণ
আপনি যদি বৈধভাবে বিদেশে ভ্রমণ করেন এবং কোন কারণবশত দেশে চলে আসেন, সেক্ষেত্রে আপনি পূর্ণবাসন ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। রাজনৈতিক, সামাজিক অথবা নিয়োগ দাতা কর্তৃক হয়রানির শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন।
এবং আপনি স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে প্রবাসী ব্যাংক থেকে পূর্ণবাসন ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। এই ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর হয়ে থাকে। একজন ঋণ গৃহিতা সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবে তবে জামানতবিহীন সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।
৩.অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ
বিদেশে বৈধভাবে চাকরির জন্য ভ্রমণ করার পরে পরিবারের যেকোন সদস্য যেমন: বাবা, মা, ভাই, বোন, দাদা, দাদি, স্ত্রী, সন্তান অথবা নিকআত্মীয় কেউ অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। এই লোনের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর হয়।
এই ঋণ প্রকল্পে আপনি সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকার লোন গ্রহণ করতে পারবেন তবে ৩ লক্ষ টাকা জামানতবিহীন গ্রহণ করতে পারবেন, ৫ লক্ষ টাকার বেশি লোন গ্রহণের জন্য ঋণ গ্রহীতার স্থাবর সম্পত্তির রেজিস্ট্রি মর্টগেজ মূল্যে উক্ত ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
৪.বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ
কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী এবং বিদেশে মৃত্যুবরণকারী কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ চালু করা হয়েছে।
এই ঋণের সুদের হার মাত্র ৪ শতাংশ এবং ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সহজ জামানতবিহীনভাবে পাওয়া যায়, তবে ২ লক্ষ টাকার বেশি ঋণের জন্য জামানত প্রয়োজন হয়। বিশেষ পুনর্বাসন ঋণ প্রকল্পটি শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর সময়ে প্রযোজ্য।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন নিতে কি কি লাগে
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নিতে জাতীয় পরিচয় পত্র তথা এনআইডি কার্ড এবং বিদেশ ভ্রমণের ডকুমেন্টস ও আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ আরো অনেক ধরনের ডকুমেন্টস প্রয়োজন। আপনি কি ধরনের লোন গ্রহণ করতে চান তার উপরে নির্ভর করবে ডকুমেন্টসের ধরন।
অভিবাসন লোন গ্রহনের জন্য কি কি লাগে
- জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
- পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি।
- নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
- ভিসা, পাসপোর্ট ও বিএমইটি কার্ডের কপি।
- দুইজন জমিদার এবং তাদের যাবতীয় তথ্য।
- জমিদারের স্বাক্ষর করা ব্যাংকের ৩টি চেকের পাতা।
- প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক শাখায় একটি একাউন্ট।
অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন গ্রহণের জন্য কি কি লাগে
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি।
- ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে।
- পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি।
- ব্যবসা বা প্রকল্পের স্থান ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে, লিজের চুক্তিপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
- জমিদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি ছবি।
- আবেদনকারী ও জমীনদার এর পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
- কোন স্থান থেকে প্রশিক্ষণ করলে, উক্ত স্থান থেকে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট এর কপি।
- ৩টি চেকের পাতা স্বাক্ষর করে ব্যাংকে জমা করতে হবে।
- প্রকল্পের ১ বছরের আয় ও ব্যয় এর বিবরণী সহ বিস্তারিত তথ্য।
পূর্ণবাসন লোন গ্রহনের জন্য কি কি লাগে
- আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি এবং তার পাসপোর্ট সাইজের ৩ কপি ছবি।
- আবেদনকারী ও জমীনদার এর পৌরসভা বা ইউনিয়ন কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র।
- জমিদারের ভোটার আইডি কার্ডের কপি এবং তার ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি প্রয়োজন হতে পারে।
- জামানত সম্পত্তির ডকুমেন্টস এর ফটোকপি।
- বিদেশ থেকে প্রত্যাগমন সংক্রান্ত ডকুমেন্টস।
- লোন গৃহীতার বিনিয়োগের ঘোষণাপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
- লোন গৃহীতার স্বাক্ষর সহ তার ব্যাংক একাউন্টের ৩টি চেক পাতা।
- প্রকল্পের সকল তথ্য সহ গত ২ বছরের আয় ও ব্যয়ের বিবরণী।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন ফরম ডাউনলোড
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোনের আবেদন করার জন্য প্রথমে http://www.pkb.gov.bd/ প্রবাসী কল্যাণ ওয়েবসাইট থেকে লোন আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন। সহজে ডাউনলোড করার জন্য “probashi kallyan bank loan form” এখানে প্রবেশ করুন।
তারপরে আপনি যেই ধরনের লোন গ্রহন করতে চান সেই লোনের সামনে থাকা “ডাউনলোড” লেখার উপরে ক্লিক করলে ফর্মটি ডাউনলোড হবে। পরবর্তীতে কম্পিউটারের দোকান থেকে এই পিডিএফ ফাইলটি প্রিন্ট করে নিন।
অথবা আপনার নিকটস্থ Probashi Kallyan Bank শাখায় যোগাযোগ করে তাদের সাথে আলোচনা করে ফরম সংগ্রহ করতে পারেন। সঠিক তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যুক্ত করে নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় জমা দিন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদন
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে যেকোনো ধরনের লোনের আবেদন করার জন্য প্রথমে নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় যোগাযোগ করে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে Loan Application Form সংগ্রহ করুন। তারপরে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রদান করে এবং ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে ফরমটি নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখায় জমা করুন।
তারপরে ব্যাংক থেকে আপনার সকল ডকুমেন্টস ভেরিফাই করবে। সকল প্রক্রিয়া শেষে যদি আপনি লোন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন, তাহলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করে লোনের টাকা প্রদান করবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সুদের হার
- অভিবাসন লোন এর ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র ৯%, এবং লোনের সময়সীমা ২ বছর।
- পূর্ণবাসন লোন এর ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র ৯%, এবং লোনের সময়সীমা ১০ বছর।
- অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন এর ক্ষেত্রে সুদের হার মাত্র ৯%, এবং লোনের সময়সীমা ১০ বছর (সম্ভবত)।
- বিশেষ পুনর্বাসন লোন প্রকল্পটি শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর সময়ে প্রযোজ্য।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন পরিশোধের নিয়ম
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক (PKB) থেকে নেওয়া লোন পরিশোধের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী ব্যাংকের নিজস্ব নীতিমালা ও সংশ্লিষ্ট লোনের প্রকারভেদের ওপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী লোনের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে হবে এবং লোনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বা ব্যাংক চাইলে তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কত টাকা লোন দেয়
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোনের প্রকারভেদ এর উপর নির্ভর করে ১,০০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে।
লোনের প্রকার | লোনের মেয়াদ | লোনের পরিমাণ |
---|---|---|
অভিবাসন লোন | ২ বছর | ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা |
পূর্ণবাসন লোন | ১০ বছর | সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা |
অভিবাসী বৃহৎ পরিবার লোন | ১০ বছর (সম্ভবত) | সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা |
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোথায় আছে
আপনার নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কোথায় আছে তা খুঁজে বের করতে গুগলে গিয়ে সার্চ করুন “Probashi Kallyan Bank near me” লিখে। গুগল মামা আপনাকে নিকটস্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের লোকেশন খুঁজে দিবে। আপনি ওই লোকেশন অনুযায়ী প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে যেতে পারবেন।
জানতে পারেনঃ করের চাপে গরিব মরে – আমার তাতে কি?
আমাদের শেষকথা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশা করি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশের একমাত্র বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটি। লোন গ্রহনের পাশাপাশি এই ব্যাংক থেকে প্রবাসীরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে পারবে।
আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি। পরবর্তীতে যদি আপনাদের অন্য কোন ব্যাংক লোন সম্পর্কে জানতে প্রয়োজন হয় তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। এত সময় আমাদের লেখাটি দেখার জন্য ধন্যবাদ।
FAQs
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সর্বোচ্চ কত টাকা লোন দেয়?
লোন ক্যাটাগরির উপর ভিত্তি করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সর্বোচ্চ ৫০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কি সরকারি?
এটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রবাসীদের জন্য বিশেষায়িত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।