নিজেদের একমাত্র ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করে থানায় আত্মসমর্পণ করেন বাবা-মা। বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তানের নেশার জন্য টাকার দাবিতে ঘরে ভাঙচুর, মায়ের গায়ে হাত তোলা, ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানোর বাক-বিতণ্ডায় বাবার সাথে মারামারি জেরে সন্তানের প্রাণহানি। মৃত্যুর পরেই বাবা-মায়ের থানায় আত্মসমর্পণ।
একমাত্র ছেলের নেশার জন্য টাকা জোগাড় করতে না পারায় হামলার শিকার হন বাবা-মা। এরপর নাটকীয়ভাবে বাবার হাতে খুন হতে হয় একমাত্র কলিজার টুকরো ছেলে সন্তানকে। ছেলেকে পিটাতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত হত্যা করে থানায় হাজির হন বাবা-মা দুজনেই।
হত্যাকারী বাবার ভাস্যমতে, নেশাখোর সন্তানের হাত থেকে নিজের স্ত্রী তথা মৃত সন্তানের মাকে বাঁচানোর জন্য এবং নেশাখোর সন্তানের পাগলামি বন্ধ করার জন্য মারামারির একপর্যায়ে প্রতিরক্ষার কারণে আঘাত করলে দুর্ঘটনাবশত মৃত্যু হয় সন্তানের।
২৯ জুলাই, বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভার ভরপাশা এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী জাফর গাজী প্রতিরক্ষার জেরে দুর্ঘটনাবশত হত্যা করেন নিজের একমাত্র সন্তান হাসান গাজীকে।
মৃত হাসান গাজী স্থানীয় কলেজের ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। জাফর ও নাজমা দম্পতির দুই মেয়ে এবং এক ছেলে বলে জানা যায় স্থানীয় সূত্র মতে। দুই মেয়ের বিয়ের পরে একমাত্র ছেলেকে নিয়েই বাবা-মায়ের সংসার ছিল।
একমাত্র ছেলে সন্তান হাসান ছিল মাদকাসক্ত। নেশার টাকার জন্য প্রায় মারধর করত বাবা মাকে। ঘটনার দিন দুপুরে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করায় তা দিতে রাজি না হওয়ায় ঘরে ভাঙচুর শুরু করে হাসান গাজী।
ঘরের দরজা, আলনা এবং ফ্রিজের বৈদ্যুতিক লাইন ছিন্ন করে এবং ফ্রিজ ঘর থেকে বাইরে ফেলে দেওয়া এবং ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বাবা-মাকে এবং মাকে লাথি মেরে এবং সামনে আসলে ছিড়ে ফেলার মত জঘন্য ভাষা ব্যবহার করেন। নিজের স্ত্রীকে বাঁচাতে সন্তানের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে বাবাকেও মারধর করতে শুরু করেন।
এবং বাপ ছেলের মারামারি একপর্যায়ে পাশে পড়ে থাকা লোহার রডের আঘাতে মৃত্যু হয় সন্তানের। আত্মরক্ষার জেরে পাশে পড়ে থাকা লোহার রডের বাড়িতে সন্তানের মৃত্যুর পরে বাবা-মা দুজনেই থানায় হাজির হন এবং আত্মসমর্পণ করেন।
নেশাখোর বন্ধুর ফোন পেয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে হয়ে বাবা-মায়ের কাছে ৫০০০ টাকা দাবি করায়। তা দিতে রাজি হয় না বাবা-মা এবং বাবা জানায় আমি জ্বরে অসুস্থ মাছ বেচতে যেতে পারিনি যে কারণে আমার কাছে টাকা নেই।
তাতে মানতে রাজি নয় ছেলে এবং জোরজবরদস্তি শুরু করে ৫০০০ টাকার জন্য এবং একপর্যায়ে নিজের মাকে মারে এবং তখন বাধা দিতে গেলে বাবাকেও মারধর করার শুরু করেন নেশাখোর এই সন্তান।
মায়ের ভাষ্য মতে নেশার পরে ছেলের শরীরে অসম্ভব শক্তি হয় এবং তাকে কোনভাবেই আটকে রাখা যায় না সে প্রায়শই তার মাকে রান্না করতে বাধা দেয় এবং টাকার দাবি করে এবং তার মাকে অন্য কারো ঘরে গিয়ে তার স্বামী ঘরে ফেরার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় এবং স্বামী ঘরে থাকলে তাকে পাহারা দিলেই সে রান্না করতে পারে তা না হলে সন্তানের অত্যাচারে সে রান্নাবান্নাও ঠিকমতো করতে পারেনা।
ঘটনার দিন ৫ হাজার টাকার দাবিতেও অন্যদিনের মতোই সে ঘরের দরজা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙতে শুরু করে এবং ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় এবং বাবা-মায়ের দুজনার গায়ে হাত তোলার প্রতিবাদে বাবা সন্তানকে বাধা দিতে গিয়ে আঘাত করে এবং দুর্ঘটনা বসত মৃত্যু হয় সন্তানের। সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা দুজনেই স্থানীয় থানায় আত্মসমর্পণ করে।
থানায় এসে বাবা-মা দুজনে জানায় নিজেরা পিটিয়ে হত্যা করেছেন নিজেদের সন্তানকে এবং তাদেরই ভাষ্যমতে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃত সন্তানকে নিয়ে যায় নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
পুলিশের ভাষ্যমতে, বিকেল চারটার নাগাদ জাফর গাজী এবং নাজমা দম্পতি থানায় এসে জানান নিজেদের সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন তারা। তাদের দুজনার বক্তব্য অনুযায়ী ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ উদ্ধার করে এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু বলে ঘোষণা করেন।
আবু জাফর গাজী এবং নাজমা বেগম পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার পরে পুলিশের হেফাজতে বর্তমানে আছেন তারা। এবং তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এবং এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
হত্যাকারী বাবা মায়ের দাবি, মাদকের সাহায্যকারী বন্ধুদের ফোনের মাধ্যমে খুঁজে বের করা এবং আশেপাশে এলাকায় যারা মাদক গ্রহণ করে বা মাদক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাদকের এই ভয়াবহতা এখন শুধুমাত্র এই একটি গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। মাদকের এই জাল ছড়িয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে।
