২৮ অক্টোবর ২০০৬ এর পল্টন হত্যাযজ্ঞের যেন পুনরাবৃত্তি হল ৯ জুলাই ২০২৫ পুরান ঢাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী সোহাগের হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে। যে বর্বরতা অনায়াসে হার মানাবে পৃথিবীর বুকে ঘটে যাওয়া নৃশংস যে-কোনো হত্যাযজ্ঞকে।
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের কিংবা ২৫ এ মার্চ কাল রাত্রির হত্যাযজ্ঞের বর্বরতার বর্ণনা গোটা বাঙালি জাতি শুনলেও আজ তার বাস্তব দৃশ্য সকলের চোখের সামনে ঘটালো কথিত বিএনপি’র নেতারা।
লালচাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যার বর্বর দৃশ্য চেঙ্গিস খান কিংবা মধ্যযুগীয় কোন বর্বরতার থেকে কোন অংশেই কম নয়। মৃতপ্রায় একটা মানুষের শরীরে ইট পাথরের তৈরি ব্লক দ্বারা বারবার নৃশংসভাবে আঘাতের দৃশ্য নাড়িয়ে তুলেছে গোটা জাতিকে।
বুকের উপর এবং সোহাগের সুন্দর মুখের উপরে আঘাতগুলো যেন প্রমাণ করে দেয় বর্বরতার সীমালংঘন। আর এই বর্বরতার সীমালংঘনকারীদের অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত।
বিএনপি নেতাকর্মীদের জনসমক্ষে ঘটানো এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বব্যাপী নিকৃষ্ট যেকোনো হত্যাযজ্ঞকে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিতে সক্ষম। ২০০৬ এর মতই প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে জনসম্মুখে মানুষকে পিটিয়ে মারার মতো প্রতিহিংসা ২০২৫-এ পুনরাবৃত্তি হলো।
একই কায়দায় লাশের উপরে বর্বর নৃত্যের দৃশ্য দেখতে পেল গোটা বাংলাদেশ। আর এই সকল কিছু নেপথ্যে জড়িয়ে আছে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলের নাম বিএনপি, যুবদল কিংবা ছাত্রদল এর মত সংগঠনগুলো।
ফিরে দেখা ২৮ অক্টোবর ২০০৬ঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর ২০০৬ একটি জঘন্যতম দিন হিসেবে জনসাধারণের স্বীকৃত।
এ ঘটনার বর্বরতা এবং নেক্কারজনক নৃশংসতা বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায়ের একটি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার নৃশংসতাকে বাদ দিয়ে কোনভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থ-সামাজিক ওপ্রতিহিংসা পরায়ণতার ইতিহাস লেখা সম্ভব নয়।
২৮ অক্টোবরের নিশংসতা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল এবং পরিবর্তিত হয়েছিল এই জঘন্য বর্বরতার পরে।
দিনটি ছিল তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন। তার আগে ২৭ অক্টোবর বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের লক্ষ্যে জোটভুক্ত দলগুলো আলাদা আলাদা ভাবে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
বিএনপির সমাবেশ স্থল নির্ধারণ করা হয় নয়া পল্টনে তাদের অফিসের সামনে, অন্যদিকে জামায়াত সহ ইসলামী দল সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেয় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের কাছে।
চারদলীয় জোট যখন সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হস্তান্তরের দিন তার দলের ও জোটভুক্ত ১৪ দলের নেতাকর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
যার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীলীগ সহ জোটভুক্ত দলের নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা নিয়ে, তৎকালীন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাষণের পর থেকেই সারাদেশে শুরু হয় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের পায়তারা।
শুরুহয় বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামাতের অফিস সহ নেতা কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে আগুন এবং নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। সেদিন সারাদেশে জামাত শিবির ও চারদলীয় জোটের ৫৪ জনের মত নেতা কর্মী শাহাদাত বরণ করেন, আহত হন প্রায় ৫০০ মানুষ।
সাংবাদিক পেশাজীবী, সাধারণ মানুষ বাদ যায়নি সেদিন কেউই। এ বর্বরতার হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী, বৃদ্ধ, মায়ের কোলে শিশু এবং সাধারণ জনগণ। আর এই নিশংসতার সবথেকে ভয়াবহ দৃশ্য ছিল লাশের উপরে উল্লাস করা এবং বর্বর জাতির মত মৃত ব্যক্তির উপরে দাঁড়িয়ে নৃত্য করা।
২০২৫ যেন অক্টোবর ২০০৬ এর পুনরাবৃত্তিঃ ২০০৬ তথা আওয়ামী লীগের পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের পরে মৃতদেহের উপরে উল্লাস করার চিত্র যেন আবার দেখতে পেল দেশবাসী ৯ জুলাই ২০২৫ পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সম্মুখে।
তবে শত্রুতা বা অতিহিংসাত্মক ব্যাপারটা এবার বিরোধী দলের জন্য ছিল না, বরং এটা ছিল নিজ দলীয় নেতাদের মধ্যে ব্যবসায়ের সিন্ডিকেট নিয়ে ভাগাভাগি অথবা লভ্যাংশের ৫০% চাঁদা দাবির বিষয়কে কেন্দ্র করে।
জনসম্মুখে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের এবং পৈতাশিকতার আত্মনিহিত শক্তির সম্পূর্ণটাই বিএনপি যুবদল কিংবা ছাত্রদলের থেকেই পাওয়া।
বর্তমানে আওয়ামী-লীগ সরকার দেশের বাইরে পলাতক থাকায় কথিত বিএনপি নেতারা যেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জ্বালাও-পোড়াও এবং পাড়া-মহল্লায় মোটরসাইকেলের বহড়া করে জানান দিচ্ছে তাদের ক্ষমতার কথা।
দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাচ্যুত থাকার পরে খোলা মাঠে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করার প্রবণতা থেকেই শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতা দখলের এই লড়াই। দখলের লড়াইয়ের বলি বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী সোহাগ। এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরাও বিএনপি এবং যুবদল কিংবা ছাত্রদলেরই সদস্য।
দেশের একটা বড় দল দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় না থাকার পরে কতটা আগ্রাসী হলে ক্ষমতায় আসার পূর্বে এ ধরনের কর্মকান্ড করতে পারে এবং জনসম্মুখে নিজেদের ক্ষমতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য মৃতদেহের উপরে এত নিষ্ঠুর এবং নিকৃষ্ট ভাবে অত্যাচার চালাতে পারে সেটা দেখে আজ আতঙ্কিত পুরো দেশবাসী।
তাহলে কি ধরে নেওয়া যাচ্ছে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমরা আবারও দেখতে যাচ্ছি ২০০৬ এর পুনরাবৃত্তি। আবারো কি তাহলে দেখা যাবে লাশের উপরে উঠে নিত্য করতে, উল্লাস করে লাশের গায়ে লাফাতে একদল মানুষকে।
নাকি আবারো আন্দোলন এবং প্রতিবাদের মাধ্যমে এই প্রতিহিংসা ও বর্বরতাকে থামিয়ে দিতে পারবে জেন-জি রা?
আওয়ামীলীগ সরকারের অভাবনীয় পতনের পরেই যেন আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বিএনপি’র লুকিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও অপরাধী নেতৃবৃন্দ। পাড়ায় পাড়ায় জনমনে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন সময় মোটর-সাইকেলের বহড়া। এবং প্রায় দেখা যাচ্ছে দলবদ্ধ ভাবে হুমকি দেওয়ার প্রবণতা।
ক্ষমতায় বসার পূর্বেই যে দলের নেতাকর্মীরা এত দম্বিকতা ও উর্ধ্বের সাথে মানুষকে হত্যা করতে পারে, মৃতদেহের উপরে চালাতে পারে ইট-পাথরের তৈরি ব্লকের আঘাত, চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি যাদের নিত্যদিনের রুজি রুটি।
ক্ষমতায় আসার পরে তাদের থেকে দেশের সাধারণ মানুষ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কি পাবে বলে আশা করা যায়?
বিএনপি কেন এত লাগামহীনঃ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় না থাকায় ক্ষমতার লোভে পাগল প্রায় বিএনপি নেতারা, প্রায়শই উদ্ভট মন্তব্য করে বিরোধী দল কিংবা সাধারণ জনতার উদ্দেশ্যে।
সন্ত্রাসী দল আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে যেন বিএনপির যুবদল এবং ছাত্রদল মরিয়া হয়ে উঠেছে নিজেদের শক্তিকে প্রমাণ করার জন্য এবং জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির জন্য।
তাইতো পাড়ায়-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে এত বছর ধরে লুকিয়ে থাকা কথিত বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ফিরে এসে শুরু করেছে চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, হত্যাযজ্ঞের রাজত্ব। এর মধ্য দিয়ে প্রজার মনে রাজার জন্য ভয় সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা।
আর সকল অপরাধের শাস্তি একমাত্র দল থেকে বহিষ্কার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বিএনপি। বাংলাদেশি সিনেমার পুলিশের মত অপরাধ হওয়ার পরে হাজির হওয়ার মতো বিএনপির এই বহিষ্কারের বিষয়টাকে সম্পূর্ণ নাটকীয় বলে মনে করছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ।
যার ফলে দিনে দিনে বিএনপি হারাচ্ছে তাদের বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের শেষ অংশটুকু। তাই বিএনপির উচিত এখনই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
দেশের ছোট বড় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সকল দলীয় রাজনীতিবিদরা বিএনপি সদস্যদের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে।
এই হত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর এবং বিএনপির পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক সারা না পেলে ২০২৪ এর জুলাই পুনরাবৃত্তি হতে দেখা যাবে শীঘ্রই বলে হুঁশিয়ারি জেন-জিদের।
জানতে পারেনঃ বিএনপি নাকি খুনি চাঁদাবাজ কি নামে ডাকবো আজ, বিনা ক্ষমতায় লাশের উপর করছে তারা উন্মাদ নাচ।
